প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ-১
বিশ্বাসকে
যুক্তির দাঁড়িপাল্লায় মাপা কি খুব
সহজ? অবিশ্বাসীকে কতটা মায়াভরা স্পর্শে
বিশ্বাসের শীতল পরশ দেয়া
যায়? যুক্তিই মুক্তি নাকি বিশ্বাসের যুক্তিতে
মুক্তি? এমন কিছু প্রশ্নের
সম্মুখীন আর নিষিদ্ধতায় ঘেরা
বইটি হলো "প্যারাডক্সিকাল সাজিদ"।
{getToc} $title={Table of Contents}
লেখক :
আরিফ আজাদ |
আরিফ আজাদ। আরিফ আজাদ জন্মেছেন চট্টগ্রামে ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় থেকেই লেখালেখির হাতেখড়ি । ইসলামি সাহিত্য নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন । ২০১৭ সালের একুশে বইমেলায় ‘ প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ' লিখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন । বিশ্বাসের কথাগুলোকে শব্দে রূপ দিতে তার জুড়ি নেই । ইসলামি ভাবধারাকে কলমের তুলিতে তুলে ধরতে লেখকের রয়েছে মুনশিয়ানা ৷ ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় লেখকের পাঠকনন্দিত বই ‘ আরজ আলী সমীপে এবং ২০১৯ সালে তুমুল জনপ্রিয় সাজিদ সিরিজের দ্বিতীয় বই * প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ -২ ' । ২০২০ সালের একুশে বইমেলায় লেখকের প্রকাশিত চতুর্থ মৌলিক বই “ বেলা ফুরাবার আগে । এছাড়াও সম্পাদনা করেছেন প্রত্যাবর্তন ' আর ' মা , মা , মা এবং বাবা এর মতো জনপ্রিয় বইগুলো ৷
বই সম্পর্কে :
বইতে
প্রথমেই অমুসলিমদের কিছু প্রশ্নোত্তর(যেমন-বনু কুরাইজার ঘটনা,অমুসলিমদের অধিকার ইসলাম নিশ্চিত করে কিনা),তারপর
খ্রিস্টান মিশনারিদের অভিযোগের জবাব,সালমান রুশদির
The Satanic verses বইয়ের
মিথ্যাচারের জবাব,ক্রিসমাস ডে'র ইতিহাস,কাবার
ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে আলোচনা করা
হয়েছে।যা এবারের বইকে একটু ভিন্নরকম
ভাবে উপস্থাপন করেছে।সবচেয়ে ভালো লেগেছে 'পবিত্র
কুরআন কেন আরবী' এই
আর্টিকেলটি যেখানে আরবি সাহিত্যের বৈচিত্র্যতা
ও বিস্ময় নিয়ে আলোচনা করা
হয়েছে।সুরা ফাতিহার অদ্ভুত সাহিত্যগুণ দেখানো হয়েছে।আরেকটা অবাক করা আর্টিকেল
হচ্ছে 'নিউটনের ঈশ্বর' বিজ্ঞানী হিসেবে নিউটনকে আমরা সকলে চিনলেও
ধর্মপণ্ডিত নিউটনের ব্যাপারে খুব কমই শুনেছি।যেখানে
নিউটন ঈশ্বর সম্পর্কে ১২টি সূত্র বলেছেন।
আমাদের সবার
মনে ধর্ম নিয়ে নানরকম প্রশ্ন জাগে। হয়তো কাউকে বলা হয়না কিন্তু নিজের মাথায় ঠিকই ঘুরপাক
খায়। এমই কিছু প্রশ্ন উত্তর নিয়ে রচিত বই “প্যারাডক্সিকাল সাজিদ”। এই বইটিতে ২২টি অধ্যায়
রয়েছে। অর্থাৎ ২২টি প্রশ্ন উত্তর। গল্পের মূল চরিত্র হলো সাজিদ। তার কাছের মানুষরা
বিভিন্ন প্রশ্ন করে তাকে নাস্তিক বানাতে চায়। চমৎকার বিষয় হলো, সাজিদের উত্তর। সাজিদের
বোঝানোর ধরণ আর উদাহরণ গুলো অসাধারণ। নাস্তিকদের অযৌক্তিক প্রশ্নেও হাস্যোজ্জ্বল মুখে
কোরআন হাদিস, সাইন্স, দর্শন, বাস্তবতার প্রেক্ষিতে সঠিক দ্বীন তুলে ধরেছে।
বইটির প্রতিটি
অনুচ্ছেদে নাস্তিকদের যৌক্তিক অযৌক্তিক প্রশ্নের উত্তর খন্ডণ করা হয়েছে। উপন্যাসের
আদলে গড়া বইটির পদে পদে রয়েছে বিজ্ঞান ও যুক্তির অভিনব সব কথা্ রয়েছে সাহিত্যরস ও কঠিন
বাস্তব তার সংমিশ্রণ।
সবমিলিয়ে
বইটা অত্যন্ত চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখক আরিফ আজাদ।সকল
মুসলিম ভাই-বোনদের অত্যন্ত
একবার হলেও বইটা পড়া
উচিত।
লেখনশৈলী :
লেখকের লেখনশৈলীর
কথা বলে শেষ করা যাবেনা। বৈজ্ঞানিক ব্যাপারগুলো কঠিন মনে হলেও বিষয়গুলো লেখক উপস্থাপন
করেছেন খুবই সাবলীলভাবে যাতে সবার বুঝতে সুবিধা হয়। লেখকের অনুভূতি, অভিব্যক্তি কলমের
দ্বারা প্রতিটি বইয়ে ফুটে উঠেছে সুনিপুণভাবে।
পাঠ প্রতিক্রিয়া :
বর্তমান যুব
সমাজকে আত্মিক ও মানসিক অবক্ষয় হয়ে রক্ষা করতে এই বইটির অবদান অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানের
উৎকর্ষতা আমাদের জীবন যাত্রায় বহুল পরিবর্তন সাধিত করেছে। বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ কিছু
মানুষকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যার বুদ্ধিভিত্তিক জবাব দেওয়া হয়েছে “প্যারাডক্সিকাল
সাজিদ” বইয়ে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার মনে হয়েছে বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে সবসময় ধর্ম তথা কোরআনের
বিভিন্ন ভুল ধরবার চেষ্টা করা হয়, বিজ্ঞান যে ক্ষণেক্ষণে পরিবর্তিত হয় সেটা চোখে আঙুল
দিয়ে দেখানো হয়েছে। ”আমরা বিজ্ঞান দিয়ে কোরআনকে বিচার করিনা; বরং দিনশেষে বিজ্ঞানই
কোরআনের সাথে এস কাঁধে কাঁধ মেলায়” উক্তিটি আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। পরিশেষে বলতে
চাই, একসময় যুবকেরা হিমু হতে চাইলেও এমন একদিন আসবে সেদিন সত্যিই যুবকেরা সাজিদ হতে
চাইবে অবিশ্বাসীদের বিশ্বাস হয়ে।